picture

শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৪

উইন্ডোজ 8 নাকি উইন্ডোজ 7 ?

ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ডমিনেট করছে এ কথা বললে ভুল হবে না। গত মে মাস পর্যন্ত পরিসংখ্যানে আমরা যে চিত্র দেখতে পাই তাতে উইন্ডোজ ৭ সবার থেকে এগিয়ে। ৫৫.২ ভাগ ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটারে উইন্ডোজ ৭ চালায়।
উইন্ডোজ ৭ রিলিজ হয়েছিল ২০০৯ সালে। ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই অপারেটিং সিস্টেম। যেহেতু সবকিছু পরিবর্তিত হচ্ছে তাই মাইক্রোসফটও তাদের অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করার ঘোষনা দিয়েছিল ২০১১ সালে। এবং ঘোষণা অনুসারে ২০১২ সালে তারা বাজারে নিয়ে এসেছিল উইন্ডোজ ৮।
কিন্তু সমালোচনার মুখে পড়ে এই অপারেটিং সিস্টেম। পরবর্তীতে নানা রকম ত্রুটি অপসারণ করে উইন্ডেজ ৮ এর আপগ্রেডেড সংস্করণ উইন্ডোজ ৮.১ রিলিজ করে তারা। এটা রিলিজ হয় ২০১৩ সালে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় উইন্ডোজ ৮ এর ব্যবহারকারী ১৬.৬ ভাগ।
(অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারের পরিসংখ্যান যদি কেউ জানতে চান: ম্যাক ওএসএক্স ১০.০ ভাগ, লিনাক্স ৫.১ ভাগ, মোবাইল ৪.২, এক্সপি ৭.৩ (!), ভিস্তা ১.২)
এখনও উইন্ডোজ এক্সপি'র ব্যবহারকারী ৭.৩ ভাগ দেখে অবাক লাগলো। যাই হোক এই পোস্টে আমরা উইন্ডোজ ৭ এবং উইন্ডোজ ৮ এর পারফরম্যান্স ভিত্তিক তুলনা করবো। যারা উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার করছেন কিন্তু ৮ এ শিফট হতে চাচ্ছেন আশা করি তাদের উপকারে আসবে।

বুট টাইম:

উইন্ডোজ ৮ ভিত্তিক মেশিনের বুট টাইম মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। যদি কেউ এসএসডি তে ওএস ইনস্টল করে থাকে তাহলে সেটা আরও বৃদ্ধি পাবে। কম্পিউটার চালু করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার দিন শেষ। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়াররা হাইবারনেশন এবং শাটডাউন মোড একত্রিত করেছে। উইন্ডোজ ৮.১ এ ব্যবহারকরা হয় হাইব্রিড বুট মোড যার মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে পিসির স্টার্টআপ হওয়া সম্ভব। মূলত নতুন ওএস কার্নেলকে হাইবারনেট করে থাকে। আগে পুরো সিস্টেম শাটডাউন করা হতো এবং চালু করার সময় সকল কোরের স্টার্টআপ প্রয়োজন হতো।
সিদ্ধান্ত: যত দ্রুত আপনার কম্পিউটার চালু হবে আপনার প্রোডাক্টিভিটি তত বাড়বে। সুতরাং বুট টাইমের দিক থেকে উইন্ডোজ ৭ এর চেয়ে উইন্ডোজ ৮ এগিয়ে নিঃসন্দেহে।

এন্টারপ্রাইজ ফিচার:

উইন্ডোজ ৭ এর চেয়ে ৮ এ বেশি এন্টারপ্রাইজ ফিচার রয়েছে। উইন্ডোজ ৮.১ এর এন্টারপ্রাইজ এডিশন রয়েছে একটি যাতে আলাদা করে একটি ফিচারই যোগ করা হয়েছে। এর নাম "উইন্ডোজ টু গো"। যা ব্যবহারকারীকে ইউএসবি'র মাধ্যমে কাস্টমাইজ করা পারসোনালাইজড উইন্ডোজ সংস্করণ চালানোর অনুমোদন দিয়ে থাকে। এটা চালানো যাবে অন্যান্য উইন্ডোজ ৭ ও ৮ ভিত্তিক পিসিতে। আইটি অ্যাডমিন কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই ভার্চুয়ালি উইন্ডোজ চালাতে সক্ষম। আপনার উইন্ডোজ ৮.১ এর কপি তে যদি "হাইপার-ভি" সাপোর্ট সক্রিয় করে নেন তাহলে সার্ভারে সংযুক্ত হতে পারবে সহজে।
উইন্ডোজ ৮.১ এ রয়েছে মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্টের জন্য উন্নত সাপোর্ট। এনএফসি'র মাধ্যমে প্রিন্ট করা (ট্যাপ করে), উন্নত বায়োমেট্রিক্স, ম্যালওয়্যার প্রতিরোধক এবং এনক্রিপশন।
তবে বিশ্বের আইটি ডিপার্টমেন্টগুলো উইন্ডোজ ৮ এর তুলনায় ৭ কেই এগিয়ে রাখছেন। এইচি বলেছে, "যে সকল কোম্পানি উইন্ডোজ এক্সপি থেকে এন্টারপ্রাইজ চয়েসের জন্য আপগ্রেড করতে চায় তাদের জন্য সেরা অপশন উইন্ডোজ ৭"।
এন্টারপ্রাইজের জন্য প্রয়োজন স্ট্যাবিলিটি। উইন্ডোজ ৭ এর রয়েছে সময়ের অ্যাডভান্টেজ, সবার কাছে পরিচিত, পেরিফেরাল কম্পাটিবিলিটি। এদিক থেকে উইন্ডোজ ৭ কে এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে।
সিদ্ধান্ত: যদিও উইন্ডোজ ৮ এ অত্যধিক এন্টারপ্রাইজ ফিচার রয়েছে, উইন্ডোজ ৭ ইতোমধ্যে সকল বড় বড় প্রোজেক্টে ব্যবহার করা হয়ে গেছে, সবাই এর সাথে পরিচিত, এবং বিশ্বস্ত সিস্টেম। এখন নতুন করে উইন্ডোজ ৮ এ শিফট হতে সময় লাগবে। স্ট্যাবিলিট, ব্যবহার উপযোগীতা সব কিছু পরীক্ষা করার পর এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ৮ এর ব্যবহার বাড়ানে হবে।

পারফরম্যান্স:

মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ এর জন্য তাদের ওএস ইঞ্জিন নতুন করে গঠন করেছে। ফলাফল হিসেবে ব্যবহারকারীরা পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত গতির একটি সিস্টেম যা আপনার সময় বাঁচাবে নিঃসন্দেহে। লো-এন্ডের পিসিতে নিমিষেই ইনস্টল করে নেয়া যাবে উইন্ডোজ ৮ এবং পাওয়া যাবে উন্নত পারফরম্যান্স। নতুন অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত সাধারণ কিছু রঙ এবং কিছু ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট। উইন্ডোজ ৭ এ অ্যারো গ্লাস ইফেক্ট যে পরিমান রিসোর্স টেনে নিতো এখন সেটা আর হবে না। এ কারণে আপনি পাবেন দ্রুত গতিতে কম্পিউটার অপারেট করার এক্সপেরিয়েন্স।
সিদ্ধান্ত: মিনিমাল ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সম্বলিত শক্তিশালী একটি সিস্টেম উইন্ডো ৮। কিছুক্ষণ ব্যবহার করলে পার্থক্য টা নিজে উপলব্ধি করতে পারবেন।

ইন্টারফেস:

সমস্যাটা মনে হয় এখানেই। ফ্রন্ট ফেসিং ইউজার ইন্টারফেসে মাইক্রোসফট বড় পরিবর্তন এনেছে। অনেকের কাছে মনে হবে দুটো অপারেটিং সিস্টেমের সমন্বয় এটি। কম্পিউটার চালু করলে নতুন স্টার্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে আপনাকে গ্রিটিং জানানো হবে। স্ক্রিনটি একটি পেজ যাতে থাকছে লাইভ টাইলস। হঠাৎ করে আপনার মনে হতে পারে আপনার ডিসপ্লে ডিভাইসে টাচ ফিচার থাকলে ভাল হতো। উইন্ডোজ ৮ এ ৭ এর মত স্টার্ট মেনু নেই, এটা নিয়ে অনেক আগেই আপনারা শুনেছেন। একটা বাটন অবশ্য রয়েছে, সেখানে ক্লিক করলে নতুন লাইভ টাইল সম্বলিত পেজ খুলবে। মেট্রো ইন্টারফেসে আমরা অভ্যস্ত নই বলে সমস্যাটা হচ্ছে।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে ফিচারটা অনেক কুল। আমি চাইলে আমার পছন্দমত অ্যাপ স্টার্ট পেজে নিয়ে আসতে পারি এবং অযাচিত সব কিছু অপসারণ করতে পারি। এতে করে কাজের সময় বাঁচানো যাবে নির্ঘাত।
সিদ্ধান্ত: ব্যাক্তিগতভাবে যা মনে হয়েছে সেটা কিন্তু আরও ১০ জন ব্যবহারকারীর মনে হয় নি। তাই ফ্যামিলিয়ার ইন্টারফেস ব্যবহার করারই আপনার জন্য শ্রেয়। অর্থাৎ উইন্ডোজ ৭। তবে পরিবর্তনের যুগে তাল মিলিয়ে চলা আমাদের উচিত নয় কি ? সিদ্ধান্ত আপনার কাছে।

সিকিউরিটি:

সিঙ্গেল ইউজার অথবা ব্যাবসার কাজে পিসি নিরাপদ রাখা আবশ্যক। এবং সকলেই জানেন যে উইন্ডোজ হচ্ছে ম্যালওয়্যার ও ভাইরাসের প্রধান টার্গেট। উইন্ডোজ ৭ এবং ৮.১ এর দুটোতেই বিটলকার ড্রাইভ এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়। তবে উইন্ডোজ ৮.১ এ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটা সক্রিয় হয়ে থাকে। আপনি চাইলে বিনামূল্যে উইন্ডোজ ৭ এর জন্য মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনশিয়াল ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে উইন্ডোজ ৮ এ বিল্ট-ইন করা রয়েছে এগুলো। ৮.১ এ আরও রয়েছে সিকিউর বুটিং এর জন্য সাপোর্ট (UEFI সিস্টেমে)। ম্যালওয়্যার আর আপনার বুটলোডারে ইনফেক্ট করতে পারবে না। যে সকল পিসি ৮.১ এ চলবে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে VPN এ সংযুক্ত হতে সক্ষম।
সিদ্ধান্ত: নিঃসন্দেহে উইন্ডোজ ৮ এগিয়ে রয়েছে। ওএস যত আপগ্রেড হবে নিরাপত্তা ফিচার তত বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

অন্যান্য:

উইন্ডোজ ৮ এর আরও চমকপ্রদ কিছু জিনিস যোগ করা হয়েছে। মূলত ব্যবহারকারীর সুবিধা ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে মাইক্রোসফট এগুলো যোগ করতে কার্পণ্য করে নি।
টাস্ক ম্যানেজারে যোগ করা হয়েছ অতিরিক্ত কয়েকটি গ্রাফ। পিসি'র অবস্থা আরও সহজে বোঝার জন্য এই পদ্ধতিটি উত্তম। প্রতিটি প্রোগ্রাম আপনার পিসি'র বুট টাইমের উপর কতটুক ইফেক্ট ফেলে তা দেখতে সক্ষম হবেন।
এছাড়া উইন্ডোজ ৮ এ যোগ করা হয়েছে ইউএসবি ৩ এর জন্য ওএস লেভেল সাপোর্ট। মাইক্রোসফট ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারের উপর নির্ভর না করে নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমেই সুবিধাটি যোগ করে দিয়েছে। যে কোন উইন্ডোজ ৮ এনাবলড ডিভাইসে সেকেন্ডে ৫ গিগাবিট ট্রান্সফার স্পীড এক্সপেরিয়েন্স করা যাবে।
এছাড়াও রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং সাপোর্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত টি লিখুন :