picture

বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

স্বতীচ্ছদ বা হাইমেন সম্পর্কে জানুন

হাইমেন শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে, যার বাংলা অর্থ স্বতীচ্ছদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাইমেন বা স্বতীচ্ছদ অর্ধচন্দ্রাকার একপ্রকার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী যা স্ত্রী যোনীমুখ ঘিরে থাকে। এটি স্ত্রী শরীরের অতি জরুরী অঙ্গের একটি। বয়স যত বাড়তে থাকে স্বতীচ্ছদের মুখ/ছিদ্র ক্রমশঃ বড় হতে থাকে। এটি যোনীমুখের সামনের দিকে অবস্থিত। দুই পা সম্পুর্ন ছড়িয়ে দিয়ে ছোট একটি আয়না সামনে রেখে আপনি এ পর্দাটি নিজেই দেখতে পারেন।
যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান বলেছে এটি একটি আংশিক আবরনকারী পর্দা।
এমনকি অনেক নারী এ পর্দা ছাড়াও জন্মগ্রহন করেন অথবা সাঁতার, খেলাধুলা সহ দৈনন্দিন কাজ কর্মের ফলে এটি ছিঁড়ে যায়। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ অঙ্গ এখনো নারীর স্বতীত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। ভারত এবং জাপান সহ বিশ্বের অনেক দেশে স্বতীচ্ছদ পুনঃস্থাপন অস্ত্রপ্রচার (প্লাষ্টিক সার্জারী) খুব জনপ্রিয়।

স্বতীচ্ছদের কাজঃ

১. কিশোরী বয়সে মেয়েদের যৌনাঙ্গকে সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করা।
২. মাসিক ঋতুচক্র শুরু হবার পর রক্তের স্বাভাবিক বহিঃর্গমন নিশ্চিত করে।

স্বতীচ্ছদের প্রকারভেদঃ

১. ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদঃ

সাধারনত এই প্রকার স্বতীচ্ছদ সম্পুর্ন যৌননালীকে ঢেকে রাখে। এতে কোন প্রকার ছিদ্র থাকেনা, তাই ঋতুচক্রের রক্ত বাহিরে আসতে পারেনা।
ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদ হবার কারণঃ
এটি সাধারনত কিশোরী বয়েসে পরিলক্ষিত হয়। নতুন জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুর শাররীক পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে এই রোগ নির্নয় করা যায়। এটা স্পষ্ট যে কিশোরীদের ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদ একটি জন্মগত রোগ এবং ইপিথিলিয়াল কোষের (খাদ্যযন্ত্র/খাদ্যনালী তথা মুখগহ্বর থেকে পায়ূপথ পর্যন্ত রাস্তার বাহিরের ঝিল্লী) কার্যকারীতা নষ্ট হবার কারনেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রদাহী কারনেও এ ধরনের সমস্যার কারন হতে পারে।
ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদের লক্ষনঃ
১. ঋতুচক্রের রক্তস্রাব না হওয়া।
২. তলপেটে ব্যাথা অনুভব করা।
৩. স্বতীচ্ছদের Epithelial (খাদ্যযন্ত্র/খাদ্যনালী তথা মুখগহ্বর থেকে পায়ু পথ পর্যন্ত রাস্তার বাহিরের ঝিল্লী) কোষর অস্বাভাবিকতা; এর ফলে যৌনাঙ্গের ভিতরে রক্তপ্রবাহ উল্টোমূখী হতে পারে।
৪. প্রস্রাবে সমস্যা।
৫. যোনীমুখের বাহিরের দুটি ভাজে নীলাভ কিংবা লালচে পিন্ড দেখা যায়।
৬. কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদের চিকিৎসাঃ
যদি কোন নারী এ সমস্যায় ভোগেন তাহলে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে এটি থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। অস্ত্রপ্রচারে স্বতীচ্ছদে ছিদ্র করার বদলে স্বতীচ্ছদের কোষ সম্পুর্ন অপসারন করে ফেলা হয়। অল্প বয়সে এই অস্ত্রপ্রচার উচিৎ নয়, বিশেষ করে যে বয়সে ইস্ট্রোজেন হরমনের স্তর খুব সামান্য। শিশুকালে যদি এই সমস্যা দেখা যায় তাহলে কিশোরীদের স্তনের আকার পরিবর্তন শুরু হলে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখতে হবে সমস্যাটি কি এখনো বিদ্যমান রয়ে গেছে কিনা। সেই বয়সে এসে অস্ত্রপ্রচার করা যেতে পারে।

. ছোট ছিদ্র স্বতীচ্ছদঃ

ছোট ছিদ্র স্বতীচ্ছদ অতি পাতলা একটি কোষ দিয়ে গঠিত, যা প্রায় যোনীমুখ পুরো ঢেকে রাখে। তবে এতে খুব ছোট একটি ছিদ্র থাকে। এই স্বতীচ্ছদ ঋতুচক্রের রক্ত প্রবাহ সম্পুর্ন বন্ধ করে দিবেনা, তবে এটি কঠিন করে তুলবে, খুব আস্তে এবং যন্ত্রনাদায়ক ঋতুচক্র হতে পারে। ছোট ছিদ্র স্বতীচ্ছদে Tampon (ঋতুস্রাবের রক্ত চুষে নেবার জন্য আঙুলের মত দেখতে একপ্রকার প্যাড, যা ঋতুকালীন সময়ে যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে রাখা যায়) ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়না, যদিও কেউ ঠিক মত খালি Tampon ঢুকাতে পারে, অতঃপর এটি রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তাদের জন্য বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যেসকল নারীর ছোট ছিদ্র স্বতীচ্ছদ সমস্যা আছে তাদের স্বতীচ্ছদের ছিদ্র ছোট হবার কারনে রক্ত প্রবাহ খুব আস্তে আস্তে হয়। তাই তাদের দীর্ঘ সময় ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। অনেক সময় কিশোরী মেয়েরা অনুমানও করতে পারেনা তাদের ছোট ছিদ্র স্বতীচ্ছদ আছে। ছোট্র একটি অস্ত্রপ্রচারের সাহায্যে স্বাভাবিক আকারের ছিদ্র তৈরি করার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

. দুই ছিদ্র যুক্ত স্বতীচ্ছদঃ

যে স্বতীচ্ছদের স্বাভাবিক ছিদ্রের মাঝে অন্য একটি স্তর পরিলক্ষিত হয় তাকে দুই ছিদ্র যুক্ত স্বতীচ্ছদ বলে, যার ফলে একটির বদলে দুইটি ছোট ছোট ছিদ্র সৃষ্টি হয়। এটি স্বতীচ্ছদের উপরে উল্লেখিত সমস্যার তুলনায় খুবই কম মাত্রায় দেখা যায়। এমনকি এ সমস্যা ২,০০০ হাজার নারীর মধ্যে মাত্র একজনের দেখা যেতে পারে। ছিদ্রহীন স্বতীচ্ছদের মত ছোট্র একটি অস্ত্রপ্রচারের মাধমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই অস্ত্রপ্রচারে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মত সময় লাগে এবং একই দিন হাসপাতাল ছেড়ে ঘরে চলে আসতে পারে। ২ দিনের মধ্যে ওই অঞ্চল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত টি লিখুন :