picture

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০১৪

বাড়িতে বসে কোটিপতি, আসলেই কি ?

বাংলা-টিউটর ব্লগ তৈরী করার পেছনে একটি বড় কারন ছিল ইন্টারনেটে আয় সম্পর্কে বিভ্রান্তি দুর করা। অনেকেরই হয়ত মনে আছে কয়েক হঠাত করেই ইন্টারনেটে আয় সম্পর্কে প্রচারনা শুরু হয়েছিল। এডসেন্স, এডওয়ার্ডস, পিটিসি ইত্যাদি থেকে সহজে হাজার হাজার ডলার আয়ের মাল্টিমিডিয়া, টাকার বিনিময়ে সেমিনার ইত্যাদি নিয়মিতভাবে দেখা যেত। ক্লিক করে আয়ের কথা বলে বড় ধরনের প্রতারনার ঘটনাও ঘটেছে। ইন্টারনেট থেকে আয়ের বাস্তবতা তুলে ধরা ছিল ব্লগের প্রথমদিকের পোষ্টগুলির মুল বিষয়।

গত ৪/৫ বছরে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তণ হয়েছে। বহু মানুষ নিজে কাজ করছেন। তাদের অভিজ্ঞতার কথা নিয়মিম প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে টাকা আয়ের ধারনা কি বদলেছে ?
জনপ্রিয় পত্রিকায় যখন প্রতিবেদন ছাপা হয়, বাড়িতে বসে কোটিপতি, তখন এপ্রশ্ন এড়ানো যায় না। বরং মনে করা স্বাভাবিক যে এখনো মানুষকে এধরনের কথা বলা যায়।
এধরনের প্রতিবেদনের বক্তব্য একই। অমুকে বাড়িতে বসে কত হাজার ডলার আয় করেছেন। আপনিও করতে পারেন।
একথা বিশ্বাস করার আগে আপনি কি প্রশ্ন করতে পারেন, যে ব্যক্তি চাকরী করার পর অবসর সময়ে হাজার ডলার আয় করতে পারেন তিনি চাকরী করেন কেন ?

আমার ধারনা অধিকাংশ মানুষ প্রশ্ন করে না। বহু টাকা পাওয়া যাবে একথা শুনে লক্ষ লক্ষ মানুষ একারনেই শেয়ার বাজার কিংবা ডেসটিনির পেছনে ছোটে। আপনি যদি প্রশ্ন করতে চান তাহলে দুটি প্রশ্ন করুন,
.        বাংলাদেশে মোট ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা কত ?
.        ফ্রিল্যান্সিং থেকে বছরে মোট আয় কত ?
এই দুটি তথ্য থেকে ধারনা পাবেন এভাবে কেউ কোটিপতি হয়েছে কি-না।
এই পুরনো প্রসংগ বরং থাক। আপনি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আগ্রহি কেন হবেন সেকথা আরেকবার জেনে নিন;
১. আপনার চাকরী খোজার প্রয়োজন নেই। প্রথমত বাংলাদেশে যে পরিমান শিক্ষিত বেকার রয়েছেন তাদের চাকরী সুযোগ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং আগামীতে সুযোগের চেয়ে বেকারের সংখ্যা আরো বাড়বে এটাই সম্ভাবনা।  যে পথে যেতে হবে সেপথে আগে রওনা দেয়াই ভাল।
২. ফ্রিল্যান্সিং অসম্ভব কাজ না। চেষ্টা করলে শতশত ধরনের কাজের মধ্যে একটি কাজ বেছে নিয়ে তাতে সফল হতেই পারেন। একজন শিক্ষিত মানুষ দেখে দেখে টাইপ করার কাজও পারবেন না এটা হওয়া উচিত না।
৩. বর্তমানে কাজের যে পদ্ধতি প্রচলিত তার দ্রত পরিবর্তন হচ্ছে। কাজের জন্য মানুষ কাউকে নিয়োগ দেয়ার বদলে অনলাইন জবসাইটের ওপর বেশি নির্ভর করছেন। এখনও যারা কাজ দিচ্ছেন তাদের বড় একটি অংশ প্রথমবার এভাবে কাজ করাচ্ছেন। আগামীতে তারা পুরোপুরি এই পদ্ধতির ওপর নির্ভর করবেন। কাজেই অনলাইনে কাজ কমবে না, কাজের পরিমান ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
৪. ফ্রিল্যান্সিং থেকে যে আয় করা সম্ভব সেটা দিয়ে সন্মানের সাথে সমাজে চলতে পারেন। রীতিমত গর্ব করতে বলতে পারেন, এই উপার্জন আমার মেধা আর দক্ষতার ফল।
আপনার অনুপ্রেরনার জন্য এটুকু তথ্যই যথেষ্ট হওয়া উচিত। ইনিয়ে-বিনিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর বর্ননা করার প্রয়োজন নেই। অনুপ্রেরনার জন্য ফ্রিল্যান্সার হলে কোটিপতি হওয়া যাবে একথা শোনা যদি প্রয়োজন হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য না। বাংলাদেশে কেন, বিশ্বে কোটিপতি হওয়ার উদাহরন পাওয়া কঠিন হবে।
ফ্রিল্যান্সার কিভাবে হবেন ?
এই ব্লগে বহু পোষ্ট হয়েছে ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয় নির্বাচন, প্রস্তুতি, কাজের পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে। অন্তত এই বিষয়ে জানার জন্য অন্য সুত্র প্রয়োজন হওয়ার কথা না। এরপরও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে অন্য কোথাও যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলি থেকে জানতে পারেন। এবিষয়ে বই/ব্লগ/ফোরাম ইত্যাদি থেকে তথ্য পেতে পারেন। এমনকি যে প্রতিবেদনের সমালোচনা করা হয়েছে সেখানেও কিছু তথ্য পাবেন যা প্রয়োজনীয়।
আপনি সঠিক তথ্য গ্রহন করছেন কি-না সেটাই গুরুত্বপুর্ন। তথ্য যেখান থেকেই আসুক, তাকে যাচাই করে নিন। এই দায়িত্ব আপনার নিজের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত টি লিখুন :